Ticker

6/recent/ticker-posts

Ad Code

Responsive Advertisement

ভ্যাটের কাজ যেভাবে শিখলাম (ভ্যাটের কাজ কিভাবে শিখবেন) [How to learn VAT]-2023

ভ্যাট ও আমার গল্প

আজকের লেখাটি একটি গল্প দিয়ে শুরু করি। আমি যখন ভ্যাট ডিপার্টমেন্টে প্রথম জব শুরু করি তখন আমর ভ্যাট সম্পর্কে খুব বেশি জানা ছিল না। কমার্সের ছাত্র হিসেবে হিসাববিজ্ঞানের অংক করার সময় ভ্যাটসহ মূল্য ও ভ্যাট ব্যতীত মূল্য এর জাবেদা শিখেছি। তারপর অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে বাংলাদেশের কর ব্যবস্থা বলে একটি সাবজেক্ট ছিলো সেখানে ব্যক্তিগত আয়কর, অংশীদারি ব্যবসায়ের আয়কর ও কোম্পানির আয়কর বিষয়ে বিভিন্ন ম্যাথ করেছি এবং মূল্য সংযোজন কর বলে একটি অধ্যায় ছিল যেখানে ভ্যাটের কস্টিংসহ কিছু ম্যাথ ছিল। ব্যসিক বলতে এতটুকু যার বাস্তব প্রায়োগিক বিষয় খুবই কম। ফাইন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং ডিপার্টমেন্টর স্টুডেন্ট হিসেবে শেয়ার, রিস্ক ম্যানেজমেন্ট, ফাইন্যান্সশিয়াল স্টেটমেন্ট এ্যানালাইসিস, রাজস্ব মুদ্রানীতি, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও আমদানি-রপ্তানি বিষয়ে থিয়োরিটিক্যাল নলেজ মোটামুটি ভালো ছিল। 

এখন মূল বিষয়ে আসি, শুরুতে আমি ভ্যাটের ধারা কোন গুলো খুঁজে পেতাম না। বিধি’র কথাতো বাদই দিলাম। যেহেতু ভ্যাট ডিপার্টমেন্টে কাজ করি সেই হিসেবে মূসক-৬.৩ চালান কিভাবে লিখতে হয় সেটা শিখলাম কিন্তু সমস্যা বাধতো টাকার পরিমাণ ছোট্ট ঘরে বসাতে সমস্যা হইতো। আমার পজিশনে যে ভাইয়া জব করতেন উনি শর্ট নোটিশে চাকুরি ছেড়ে দিলেন। তখন প্রায় ২ মাসের লেজার পোস্টি বাকি। মূসক-৬.২ ও ৬.১ দুটোই। আমাদের প্রতিষ্ঠান ক্রয় আদেশের মাধ্যমে পণ্য তৈরি এবং প্রোডাক্ট আলাদা আলাদা থাকার কারণে তখন প্রতিমাসে মূল্য ঘোষণা বা উপকরণ-উৎপাদ সহগ ঘোষণা জমা দেওয়া হইতো। মূসক-৪.৩ ও দুই মাসের বাকি। আমি তখন নতুন আর এসব কাজ পারিও না খুবই টেনশনে পড়ে গেলাম। আর নতুন হিসেবে এসে ভ্যাট অফিসের বিভিন্ন ভয় কাজ করতে লাগলো। আমি প্রথমে মূসক-৬.২ পোস্টিং শেষ করলাম তার পর আমার বস উনি হেড অফিসে বসতেন। উনি একদিন এসে পাশে বসিয়ে আমাকে শিখালেন কিভাবে উপকরণ-উৎপাদ সহগ ঘোষণা করতে হয়। তার পর উনি বসে থেকে বললেন এবার আপনি করেন। তারপর থেকে উপকরণ উৎপাদ সহগ ঘোষণা করতাম আর মেইল করতাম উনি চেক করে দেখতেন আর কোন কারেকশন থাকলে বলে দিতেন। 

আমি দেখতাম আমার ডেক্সের পাশে যে কেবিনেট আছে ওখানে অনেকগুলো মূসক-৬.৩ চালান আছে, মুসক-৬.৬ আছে। আমি এগুলোর ব্যবহার জানতাম না। যেহেতু নতুন তাই ওখানে হাত দিতাম না। তারপর পরের মাসে আমার বস আমার কাছে মূসক-৬.৩ ও মূসক-৬.৬ চালান-সনদ চাইলেন রিটার্ন পূরণ করবেন। আমি পাঠিয়ে দিলাম তারপর ঐগুলো ফেরত আসার পর রেখে দিলাম, তখন জানলাম মূসক-৬.৩ ক্রয় চালান দিয়ে রেয়াত নেওয়া যায়। রেয়াত কি সে বিষয়ে আমার কোন জ্ঞান নাই তখনো। রেয়াত রিবেট নেওয়া যায় এটাই বুঝি। আর মূসক-৬.৬ সনদ হ্রাসকারী সমন্বয় করা যায় এটা জেনেছি। 

পরে আরও জেনেছি এসব কাগজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট য পাঁচ বছর আর মামলা থাকলে শেষ না হওয়া পর্যন্ত সংরক্ষণ করতে হবে। এটা জানার পর আমি কাগজগুলো সুন্দর করে রিং ফাইল মাসের ক্রমিক অনুসারে সাজিয়ে রাখি যাতে আমি যখন রিটার্ণ ম্যাচ করি সকল কাগজ খুঁজে পায়, আমি তিন চার মাস পরে অডিট করি নিজে যে কোন কিছু ভুল হয়েছে কিনা।


এখানে আমরা ভ্যাটের কয়েকটি বিষয় বা টার্ম এর নাম জেনেছি। 

১। ধারা ও বিধি

২। মূসক-৬.৩

৩। মূসক-৬.২

৪। মূসক-৬.১

৫। উপকরণ-উৎপাদ সহগ ঘোষণা (৪.৩)।

৬। মূসক চালান-৬.৩ (ক্রয় চালান সংরক্ষণ করতে হবে)

৭। মূসক সনদ-৬.৬ সংরক্ষণ করতে হবে।

৮। মূসক-৬.৩ ক্রয় চালান রেয়াত নেওয়া যায়। আর রেয়াত ও রিবেট কিন্তু একই জিনিসি।

৯। রিটার্ণ ৯.১

১০। মূসক-৬.২.১

১১। মূসক-৬.৭ ও ৬.৮ প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)

ধারা-৫৪ বিধি-৪০ ও ৪১

 ৪/৫ মাস পর আমার বসও চাকুরি ছেড়ে দিলেন। উনি আমাদের পুরো গ্রæপের রিটার্ন-৯.১ পূরণ জমা দিতেন। তখন এক দিন বস আমাকে ফোন দিয়ে বললেন আপনাকে ৯.১ পূরণ করা শিখাবো। আমি আসতে পারছি না, আপনাকে ফোন কলে শিখাবো। তারপর উনি ফোন দিলেন আর আমি ডায়রি নিয়ে বসলাম, তারপর উনি প্রতিটি নোট ও সাব ফর্ম সম্পর্কে বুঝালেন। আমি বিস্তারিত সবকিছু নোট করে রাখলাম। ঐ বার প্রথম আমরা অন লাইনে রিটার্ন সাবমিট করি। 

বস হেড অফিসে ডেকে আমাদের সবাইকে যারা ভ্যাট নিয়ে কাজ করি, অন লাইন লগইন এবং রিটার্ন পূরণ দেখালেন তারপর আমরা যে যে কোম্পানির দায়িত্বে আছি তারা রিটার্ণ পূরণ করলাম। বস রিটার্ন চেক করে ওকে করে দিলেন। এভাবেই আমার শুরু তবে সুযোগ বেশি থাকার কারণে আমি খুব দ্রæত অনেক প্র্যাকটিক্যাল কাজ শিখতে পেরেছি। অনেকেতো বিশ্বাস করতে পারে না এক্সিকিউটিভ লেবেলের কেও কিভাবে রিটার্ন পূরণ করতে পারে আর ম্যানেজমেন্টও কিভাবে ভরসা করতে পারে।

 এখানে একটি বিষয় হচ্ছে সবার মেধা সমান না আর মেধা থাকলেও যে একগ্রতা প্রয়োজন সেটা সবার থাকে না। প্রথম দিকে ভ্যাট অফিসে যেতে খুব ভয় পেতাম, পরিদর্শনে আসবে শুনলে বা আসলে গলা শুকিয়ে যেতো। বর্তমানে কিভাবে ডিল করতে হয় শিখে গেছি। সুযোগ পেলে সবাই তার সকল ভয় কাটিয়ে উঠতে পারে। আজকের এই লেখার একটাই উদ্দেশ্য, অনেকে ইনবক্স করেন যে তারা ভ্যাটের শিখছেন বা ট্রেনিং করছেন অনেকে প্র্যাকটিক্যাল কাজ করেন না তাদের জন্য এই গল্পটি। চলুন আমরা একসাথে চলুন নীতি অনুসরণ করে এগিয়ে যাই।

ধন্যবাদ


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

Ad Code

Responsive Advertisement